চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডরের (সিপিইসি) অবকাঠামোগত উন্নয়নে ইসলামাবাদকে সহায়তার প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসতে চাইছে বেইজিং। এ প্রকল্পে ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল চীন। পাকিস্তানজুড়ে দুর্নীতি বৃদ্ধি ও সম্প্রতি চীনা প্রকৌশলীদের ওপর সন্ত্রাসী হামলার কারণে চুক্তি থেকে সরে আসতে চাইছে চীন।
এশিয়া টাইমসের বরাত দিয়ে ভারতের সংবাদমাধ্যম ইকোনমিক টাইমস জানায়, ভঙ্গুর অর্থনৈতিক অবস্থায় পাকিস্তানের জন্য সিপিইসি একটি বহুল প্রতীক্ষিত প্রকল্প। এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিরাট ভূমিকা রাখবে।
চীনা প্রকৌশলীদের ওপর জঙ্গি হামলার পর পাকিস্তান সেনাবাহিনী সিপিইসির পুরো দায়িত্ব নিতে যাচ্ছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনী চীনা ইঞ্জিনিয়ারদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিয়েছে। নতুন এই বিলটি এমন সময় এলো, যখন ধারণা করা হচ্ছে চীন ধীরে ধীরে তার অর্থনৈতিক প্রতিশ্রুতি থেকে পিছু হটছে।
পাকিস্তানের অর্থনীতিতে অনেকটা সাহায্য করে চায়না ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এবং চায়না এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংক। ২০১৬ সালে এই দুটি ব্যাংক সামগ্রিক ঋণ দিয়েছিল সালে ৭৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। সেখান থেকে কমিয়ে গত বছর মাত্র ৪ বিলিয়ন ডলার পাকিস্তানকে ঋণ দেয় চীন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর ঋণের পরিমাণ আরও ১ বিলিয়ন ডলার কমেছে।
পাক পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সূত্র জানায়, সিপিইসি প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নে পাকিস্তান চীনা সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথ কর্মপরিকল্পনা ঠিক করেছে। এর মধ্যে রেলওয়ে প্রকল্পকে যোগ করা হয়েছে।
ওই সূত্র আরও বলেন, ‘আমাদের বিদেশী বিনিয়োগ দরকার। তাই আমরা এ মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে যোগাযোগ ব্যবস্থার ওপর আরও জোর দিয়েছি।’
এদিকে, সঙ্কটময় মুহূর্তে পাকিস্তানকে সহায়তা করতে শর্ত চাপাচ্ছে চীন। চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডরের জন্য চীন বড় অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করছে, একই সঙ্গে পাকিস্তানকে লোনও দিচ্ছে। লোন দেওয়ার জন্য অতিরিক্ত নিশ্চয়তা চাইছে চীন। পাকিস্তানের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মজবুত না হওয়ায়, নির্দিষ্ট নিশ্চয়তার ভিত্তিতেই লোন দেবে চীন। কিন্তু পাকিস্তান বরাবরের মতো সস্তা সুদের হারে লোন আশা করছিল। পাকিস্তানের আশা ছিল, চীন ১ শতাংশ সুদের হারে লোন দেবে ও লোন শোধের জন্য ১০ বছরের সময় দেবে।
কিন্তু চীন জানায়, পাকিস্তানের যা অর্থনৈতিক অবস্থা তাতে লোনের জন্য পাকিস্তানের উচিত লোন পরিশোধের সঠিক নিশ্চয়তা দেওয়া। পাকিস্তানের দাবি, মেন লাইন-১ প্রোজেক্টের ফিনান্সিং মিটিং-এ চীন এই নিশ্চয়তার উল্লেখ চায়, তবে শুরুতে পাকিস্তানের সঙ্গে বৈঠকের চূড়ান্ত ব্রিফিংয়ে এটি উল্লেখ করা হয়নি বলে দাবি করেছেন এক পাক কর্মকর্তা।
চীনের কাছে এই প্রকল্পের ৯০ শতাংশ লোন চেয়েছিল ইসলামাবাদ। কিন্তু চীন জানিয়েছে, তারা ৮৫ শতাংশ অর্থ দিতে পারবে। পাকিস্তানের অবস্থা এতটাই খারাপ যে দুর্দশার কারণে বন্ধ হয়ে যেতে পারে পাকিস্তান রেলপথ। পাকিস্তানকে ঋণের জাল থেকে উদ্ধার করতে আবারও অবিলম্বে ১৫০ কোটি ডলার আর্থিক সহায়তা দিয়েছে চীন। সৌদি আরবের কাছে পাকিস্তানের দুই শ’ কোটি ডলারের ঋণ আছে। এ ক্ষেত্রে চীন যে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে সেখান থেকে ১শ’ কোটি ডলার পরিশোধ করা হয় গত সোমবার। বাকি ১শ’ কোটি জানুয়ারিতে শোধ করার কথা।
সম্প্রতি পাকিস্তানের বালুচিস্তান প্রদেশে চীনা প্রকৌশলীদের ওপর জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় আহতরা সিপিইসির কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। এর পরপরই ইমরান খান সরকার সে দেশের সেনাবাহিনীর ওপর সিপিইসির পুরো দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
পাকিস্তানের বর্তমান সরকার সে দেশের সেনাবাহিনীর সহায়তায় ক্ষমতায় এসেছে বলে বিরোধী শিবির সমালোচনা করছে। এসবের মধ্যে সিপিইসির পুরো দায়িত্ব সেনাবাহিনীর হাতে দেওয়া সংক্রান্ত খবর সামনে এলো ।
Leave a Reply